রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির প্রাণহানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২,০০০ মানুষ নিহত ও ৩৫,০০০ আহত হন। এই পটভূমিতে সম্প্রতি এসেছে নতুন সড়ক আইন, ২০১৮। এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আইনটি সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই নতুন আইনের উল্লেখযোগ্য বিধানগুলি।
সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ অনুযায়ী মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদ- অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। আদালত অর্থদন্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।
মোটরযান দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তি দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান বা গণপরিবহন চালানোর দায়ে ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত দেয়া হয়েছে ।
নিবন্ধন ছাড়া মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদ- এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার এবং প্রদর্শন করলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদন্ড অথবা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে।
ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেয়া হয়েছে।
ট্রাফিক সংকেত মেনে না চললে এক মাসের কারাদ- বা ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
সঠিক স্থানে মোটরযান পার্কিং না করলে বা নির্ধারিত স্থানে যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা না করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে এক মাসের কারাদ- এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
একজন চালক প্রতিবার আইন অমান্য করলে তার পয়েন্টে বিয়োগ হবে এবং এক পর্যায়ে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
গণ পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত ভাড়া, দাবী বা আদায় করলে এক মাসের কারাদ- বা ১০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- দ-িত করা হবে।
আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেতে হলে চালককে অষ্টম শ্রেনি পাস এবং চালকের সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে হবে। আগে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন ছিল না। গাড়ি চালানোর জন্য বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে। এই বিধান আগেও ছিল। এছাড়া সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনও যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত বিধান রাখা হয়েছে।
কন্ডাক্টর লাইসেন্স ছাড়া কোনো গণপরিবহণে কন্ডাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে ধারা ১৪ এর বিধান অনুযায়ী তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদ- বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
মোটরযানের মালিকানা পরিবর্তন বা হস্তান্তরের কারণে হস্তান্তর গ্রহীতার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ধারা ২১ এর বিধান অনুযায়ী এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক মাস কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
মোটরযানের ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে বা ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালনা সংক্রান্ত ধারা ২৫ এর বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ট্যাক্স-টোকেন ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্স-টোকেন ব্যবহার করে মোটরযান চালনা সংক্রান্ত ধারা ২৬ এর বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮